বিসিএস পরীক্ষার তিনটি ধাপের মধ্যে প্রথম ধাপ প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। এ ধাপ বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রিলিমিনারিতে নির্বাচিত না হলে বাকি দুই ধাপে যেতে পারবেন না। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় মোট ২০০ নম্বরের মধ্যে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য থেকে ৩৫টি প্রশ্ন থাকে। বাংলা ভাষা থেকে ১৫টি ও বাংলা সাহিত্য থেকে ২০টি। বিসিএস বাংলা ভাল করা মানে প্রায় ১৭.৫% অংশেই ভাল নাম্বার পাওয়া।
বিসিএস প্রস্তুতি যেভাবে শুরু করবেন
বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় মোট অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্য থেকে মাত্র ৫% থেকে ১০% প্রার্থীকে পাস করানো হয়। তাই এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে নিতে হবে একটি গোছানো ও যথাযথ প্রস্তুতি। আসুন জেনে নেই কীভাবে এই প্রস্তুতি নেয়া যায় সে বিষয়ে।
১। সর্বপ্রথম পিএসসি বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার সিলেবাসটি ভালো ভাবে আত্মস্থ করুন।
২। বিসিএস জব সল্যুশন / প্রশ্ন ব্যাংক থেকে বিগত সালের বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নগুলো দেখুন।
৩। যেসব বিষয়ভিত্তিক টপিকে আপনার দুর্বলতা আছে এবং যেসব বিষয়ভিত্তিক টপিকে আপনার বিশেষ দক্ষতা আছে সেগুলো চিহ্নিত করুন।
৪। কোন টপিকগুলো পড়তে হবে তা জানার পাশাপাশি কোন টপিকগুলো বাদ দিতে হবে এই সম্পর্কে জানুন।
৪। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টপিক গুলো আত্মস্থ করার জন্য একটি লিখিত রুটিন প্রস্তুত করুন।
৫। বিসিএস প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় বুকলিস্ট তৈরি করুন।
৬। ইংরেজি ও গণিত অংশে বিষদ প্রস্তুতি নিন।
৭। পড়ার পাশাপাশি নিজের প্রস্তুতিকে যাচাই করার জন্য বেশি বেশি মডেল টেস্ট পরীক্ষা দিন।
৮। কার্যকরী কৌশলী উপায় অবলম্বন করুন, শর্টকাট পরিহার করুন।
৯। একটি স্মার্ট রিভিশন সার্কেল অনুসরণ করুন, পুর্বে পঠিত বিষয়গুলোকে এই সার্কেলের মাধ্যমে বার বার রিভিশন দিন।
১০। একই লক্ষ্যে অবিচল পরিশ্রমী ও সমমনা পরীক্ষারর্থীদের সাথে স্টাডি গ্রুপ গঠন করে প্রসস্পরের সহযোগিতায় সমন্বিত ভাবে প্রস্তুতি নিন।
অনার্স থেকে বিসিএস প্রস্তুতি
আপনার ক্যারিয়ারের একমাত্র লক্ষ্য যদি বিসিএস ক্যাডার প্রাপ্তি হয়ে থাকে তাহলে প্রস্তুতি শুরু করতে হবে ছাত্র জীবন থেকেই। বাংলাদেশের গতানুগতিক শিক্ষা ব্যাবস্থায় সেশন জট ও নানাবিধ জটিলতার কারনে অধিকাংশ স্বায়ত্তশাসিত ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনার্স বা সমমান পর্যায়ের পড়াশোনা শেষ করতে একজন শিক্ষার্থীর স্বাভাবিকের চেয়েও অনেক বেশি সময় লাগে। যার ফলে দেখা যায় যে শিক্ষা জীবনের স্নাতক বা সমপর্যায়ে একজন শিক্ষার্থীর হাতে সবচেয়ে বেশি সময় থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধিকাংশ বিষয়ের ক্ষেত্রে স্নাতক পর্যায়ে প্রথম শ্রেণীর ফলাফল (CGPA – 3.00) ধরে রাখার জন্য খুব বেশি পরিশ্রম করতে হয় না। তাই অনার্সে অধ্যয়নরত একজন শিক্ষার্থীর বিসিএস প্রস্তুতি নেওয়ার উপযুক্ত সময় বলে বিবেচনা করা হয়। এই সময়টায় একজন শিক্ষার্থী যদি একটু একটু করে তাঁর বিসিএস ক্যাডার প্রাপ্তিত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যায় তাহলে এটা তাঁর জন্য সবচেয়ে বেশি সহজ হয়ে যায়।
কারন শিক্ষাজীবন শেষ করে যদি কেউ বিসিএস এর প্রস্তুতি শুরু করে তাঁদের জীবনে নানাবিধ প্রতিকূলতা দেখা যায়। সমাজ ও পরিবার থেকে দ্রুত কর্মজীবনে প্রবেশের তাগিদ, আর্থিক স্বাধীনতার অভাব, মানসিক বিপর্যয় ও হীনমন্যতা সহ নানাবিধ প্রতিকূলতার জন্য শিক্ষাজীবন শেষ করা একজন প্রার্থীর বিসিএস প্রস্তুতি অনেক বাধাগ্রস্থ হয়। অপর দিকে অনার্সে অধ্যয়নরত একজন শিক্ষার্থীর পারিপার্শ্বিক পরিস্থিত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাঁর অনুকূলে থাকে, বিধায় অনার্স জীবন থেকে বিসিএস প্রস্ততি শুরু করা প্রার্থীরা এই ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে।
এছাড়াও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক এর পড়াশোনার সময়কাল এর সাথে বেশি সময়ের পার্থক্য না থাকায় অনার্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করার সময় মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে পড়া বিষয়গুলো বেশি মনে থাকার কারনে বিসিএস প্রস্তুতিতে একটু সুবিধা পেয়ে থাকেন।
বিসিএস বাংলা সিলেবাস ও মান বন্টন (BCS Bangla syllabus)
বাংলা ভাষা – (নম্বর ১৫)
* প্রাচীন ও মধ্য যুগ (মার্ক ৫)
* আধুনিক যুগ (মার্ক ১৫)
বাংলা সাহিত্য – (নম্বর ২০)
বিসিএস প্রিলি প্রশ্ন বিশ্লেষণ বাংলা সাহিত্য | |||||
টপিক | ৪৪ তম | ৪৩ তম | ৪২ তম | ৪১ তম | ৪০ তম |
প্রাচীন যুগ | – | ৩ | ৩ | ১ | ২ |
মধ্য যুগ | ৫ | ২ | ১ | ৩ | ৩ |
আধুনিক যুগ | ১০ | ১৪ | ৩ | ১১ | ৮ |
পত্র-পত্রিকা | ১ | ১ | – | ১ | ১ |
গ্রন্থের লেখক, চরিত্র ও বিষয় | ৪ | – | – | ৪ | ৫ |
মোট= | ২০ | ২০ | ৭ | ২০ | ১৯ |
বিসিএস প্রিলি প্রশ্ন বিশ্লেষণ বাংলা ভাষা | |||||
টপিক | ৪৪ তম | ৪৩ তম | ৪২ তম | ৪১ তম | ৪০ তম |
ধ্বনি | ১ | ৩ | ১ | ২ | – |
শব্দ | ২ | ১ | ২ | ২ | ৩ |
বাক্য | ১ | ২ | ১ | ২ | – |
বানান ও বাক্য শুদ্ধি | ২ | ২ | ৩ | ২ | ১ |
প্রত্যয় | – | – | ১ | ১ | ১ |
পরিভাষা | ১ | ১ | ২ | – | ১ |
সমার্থক শব্দ | ২ | – | ১ | ১ | ১ |
বিপরীত শব্দ | – | – | ২ | – | ১ |
সমাস | ১ | ১ | ১ | ১ | – |
বাগধারা | ১ | ২ | – | – | ২ |
এক কথায় প্রকাশ | ২ | ১ | ১ | – | ৩ |
অন্যান্য | ১ | ২ | ১ | ৪ | ৩ |
মোট= | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৫ | ১৬ |
সিলেবাস (ব্যাকরণ)
- প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ
- বানান ও বাক্যশুদ্ধি
- পরিভাষা
- সমার্থকশব্দ
- বিপরীতশব্দ
- ধ্বনি ও বর্ণ
- শব্দ
- পদ
- বাক্য
- প্রত্যয়
- সন্ধি
- সমাস
কিছু কিছু টপিক সিলেবাসে দেয়া নেই কিন্তু এগুলো থেকেও প্রশ্ন হয়। যেমনঃ উপসর্গ।
উপসর্গটা মেবি শব্দের সাথে এড করে দিয়ে দেয়। কিন্তু সিলেবাসে না লেখা থাকায় অনেকেই তা বাদ দিয়ে দেয়।
- উপসর্গ
- বাগধারা
- বাক্য সংকোচন
- কারক
রিসেন্ট কয়েকটা বিসিএস পরীক্ষায় বাগধারা ও এক কথায় প্রকাশ থেকে অনেক গুলো প্রশ্ন আসছে। তাই এই টপিক টা গুরুত্ব সহকারে পড়তে হবে।
সিলেবাস (বাংলা সাহিত্য)
- প্রাচীনযুগ
- মধ্যযুগ
- আধুনিকযুগ
প্রাচীন যুগ :
- চর্যাপদ (বিস্তারিত)
মধ্যযুগ : কিছু গুরুত্বপুর্ণ টপিক
- শ্রীকৃষ্ণকীর্তন
- মঙ্গলকাব্য
- অনুবাদ সাহিত্য
- নাথ সাহিত্য
- লোকসাহিত্য
- আরাকান রাজসভা
- মর্সিয়া সাহিত্য
- বৈষ্ণব সাহিত্য
- কবিয়াল ও শায়ের (পুথিঁ সাহিত্য)
আধুনিক যুগ : কিছু গুরুত্বপুর্ণ টপিক
- কবি সাহিত্যিক / লেখক
- পত্রিকা
- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থাবলি
- পটভূমি
⇒ মুক্তিযুদ্ধ
⇒ ভাষা আন্দোলন
⇒ ৬৯
⇒ ৪৩
⇒ দেশভাগ
⇒ নদী/ গ্রামীন জীবন
⇒ তেভাগা আন্দোলন
- বিভিন্ন সাহিত্য প্রতিষ্ঠান
⇒ ফোর্ড উইলিয়াম কলেজ
⇒ ইয়ং বেঙ্গল
⇒ বঙ্গীয় ও মুসলিম সাহিত্য সমিতি
⇒ ঢাকা মুসলিম সাহিত্য সমাজ
⇒ বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি
⇒ বাংলা একাডেমি
কবি সাহিত্যকদের ক্ষেত্রে পিএসসির প্রিলির সিলেবাসে কোন কবির উল্লেখ না থাকলেও রিটেনের সিলেবাসে ১৭ জনের নাম দেওয়া আছে। কিন্তু এই ১৭ জনের মধ্যে ১১ জন কবি থেকে প্রায়ই প্রিলিতে প্রশ্ন এসে থাকে। তারা হলেন;
গুরুত্বপুর্ণ ১১ জন কবিঃ
- ১। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- ২। কাজী নজরুল ইসলাম
- ৩। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
- ৪। জসীম উদদীন
- ৫। মাইকেল মধুসূদন দত্ত
- ৬। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- ৭। মীর মশাররফ হোসেন
- ৮। দীনবন্ধু মিত্র
- ৯। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন
- ১০। কায়কোবাদ
- ১১। ফররুখ আহমদ
এছাড়াও পিএসসির লিখিত সিলেবাসে আরও যাদের নাম উল্লেখ আছে তারা হলেনঃ
- ১২। ঈশ্বরচন্দ্রগুপ্ত
- ১৩। বিহারী লাল চক্রবর্তী
- ১৪। প্রমথ চৌধুরী
- ১৫। নজিবর রহমান
- ১৬। জীবনানন্দ দাশ
- ১৭। শরৎচন্দ্র
এই সব কবি থেকেও বিসিএস প্রিলিতে প্রশ্ন এসে থাকে।
বাংলা সাহিত্যে পঞ্চপাণ্ডব নামে খ্যাত সাহিত্যিকগণ সম্বন্ধেও আপনাকে বিস্তারিত পড়তে হবে।
পঞ্চপাণ্ডবগণ হলেনঃ
- ১। জীবনানন্দ দাশ
- ২। বিষ্ণু দে
- ৩। অমিয় চক্রবর্তী
- ৪। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত
- ৫। বুদ্ধদেব বসু
তাছাড়া আরো কয়েকজন লেখক আছেন তাদের থেকেও প্রশ্ন আসে। যেমনঃ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, মুনীর চৌধুরী, শামসুর রহম্মান, শওকত ওসমান, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, দিজেন্রলাল রায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, হুমায়ূন আহমেদ, মুজতবা আলী, গিরিশচন্দ্র সেন, নির্মলেন্দ গুণ, সৈয়দ অলিউল্লাহ ইত্যাদি।
বিসিএস বাংলা রেফাররেন্স বুক
- বাংলা ব্যাকরণ ৯ম-১০ম শ্রেনীর বোর্ড বই (নতুন সংস্করণ)
- ভাষা ও শিক্ষা – হায়াত মামুদ
- হুমায়ূন আজাদের লাল নীল দীপাবলি
- বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা – ড. সৌমিত্র শেখর
- বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস – মাহবুবুল আলম
- শিকর বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
অনুশীলন করার জন্য যেকোনো একটা ভালো মানের গাইড (যেমনঃ এমপিথ্রি বাংলা/অগ্রদূত বাংলা/প্রফেসরস)। তাছাড়া প্রশ্ন ব্যাংক সমাধান ব্যাখা সহ পড়তে হবে।
বিসিএস প্রিলিমিনারিতে ভাষা ও সাহিত্য এবং বাংলা ব্যাকরণ এই দুটি অংশেই মূলত ৩৫ নম্বরে প্রশ্ন হয়ে থাকে। ব্যাকরণ সহজে পারলেও এই অংশে সমস্যা দেখা দেয় সাহিত্যের প্রশ্ন মনে রাখতে। বিসিএস প্রিলির বাংলার প্রশ্নগুলি দেখলে মনে হবে, পরীক্ষায় যা যা এসেছে, সেগুলি ছাড়া বাংলার আর সবকিছুই আপনি পারেন। বাংলায় ‘চেনা-চেনা লাগে, তবু অচেনা’ টাইপের প্রশ্ন বেশি আসে।
সাহিত্য অংশে সাহিত্যিকদের জন্মস্থান, তাদের অমর সৃষ্টি, বিশেষ সম্মাননা, অমর চরিত্র, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ মনে রাখতে হবে। প্রাচীন যুগ, মধ্য যুগ আর আধুনিক যুগ মিলিয়ে ৩ যুগের ই সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, সিনেমা ইত্যাদি নাম ও লেখকের নাম জানতে হবে। বাংলা সাহিত্য অংশের প্রাচীন ও মধ্যযুগের তুলনায় আধুনিক যুগ থেকে বেশি প্রশ্ন করা হয়েছে।
আধুনিক যুগের কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে পিএসসির পুরনো সিলেবাসের ১১ জন সাহিত্যিক (ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মীর মশাররফ হোসেন, দীনবন্ধু মিত্র, কায়কোবাদ, ফররুখ আহমদ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্দীন এবং বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন) থেকে প্রতিবছর নিয়মিতভাবে প্রশ্ন করা হয়।এ ছাড়া বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থ, উপন্যাস ও নাটকের লেখক ও চরিত্র থেকেও সাধারণত প্রশ্ন করা হয়।
ব্যাকরণ অংশে ধ্বনি, বর্ণ, পদ, শব্দ, শব্দের উৎস, শব্দের প্রকারভেদ, বাক্য ও এর শ্রেণীবিভাগ, বানান ও বাক্য শুদ্ধি, পরিভাষা, সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ, বাক্য, প্রত্যয়, সন্ধি ও সমাস, কারক-বিভক্তি, বিভিন্ন ধরনের বাক্য এর রুপান্তর ,উপসর্গ, অনুসর্গ ইত্যাদি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিগত বিসিএস প্রিলি পরীক্ষার প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে—বাংলা ভাষা অংশে ধ্বনি, শব্দ, বানান ও বাক্য শুদ্ধি, প্রত্যয়, পরিভাষা, সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দ, সমাস, বাক্য, বাগধারা, এককথায় প্রকাশ প্রভৃতি অধ্যায় থেকে প্রতি বিসিএসেই ২/১ নম্বরের প্রশ্ন করা হয়েছে।
প্রস্তুতির সময় ভাসা ভাসা না পড়ে বিস্তারিতভাবে পড়লে প্রিলির পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষার বাংলা ব্যাকরণ ও সাহিত্য অংশে ভালো করার সম্ভাবনা বাড়বে। এ বিষয়ে সাহিত্য অংশে কিছু আনকমন প্রশ্ন আসতে পারে, তাই ব্যাকরণ অংশ দিয়ে ভালো নম্বর নিশ্চিত করার চেষ্টা করুন।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য প্রস্তুতির জন্য ড. সৌমিত্র শেখরের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, অগ্রদূত, বাংলা জয়যাত্রাসহ বাজারে প্রচলিত যেকোনো প্রকাশনীর বই থেকে প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে।
৯ম-১০ম, ১১শ-১২শ শ্রেণীর বাংলা ১ম পত্র বইয়ের লেখক পরিচিতি অংশটি দেখে নিন। লাল-নীল দীপাবলি, জিজ্ঞাসা, মাহবুবুল আলমের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, আগের বিসিএস রিটেনের বাংলা সাহিত্যের প্রশ্নাবলী ভালভাবে পড়ে নিন।
এ বইগুলি পড়ার আগে গাইড বই আর জব সল্যুশন থেকে পুরোনো প্রশ্নগুলি যত বেশি সম্ভব, দাগিয়ে-দাগিয়ে পড়ে ফেলুন। এতে আপনি বুঝতে পারবেন, কোন ধরনের প্রশ্ন পরীক্ষায় বেশি আসে। মুখস্থ নয়, বারবার পড়ুন, এতে মনে থাকবে বেশি। সাহিত্যের সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন না, এটা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিন।
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, হায়াৎ মামুদের ‘ভাষা শিক্ষা’ থেকে সিলেবাসের টপিক ধরে-ধরে অধ্যায়গুলি পড়ে নিন।
গত বিসিএসের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সাহিত্য অংশে গতানুগতিক প্রশ্ন কম হচ্ছে। তাই প্রস্তুতি নেওয়ার সময় কেবল সাহিত্যকর্ম পড়লেই হবে না। সাহিত্যকর্মের চরিত্র ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানতে হবে।
ব্যাকরণের জন্য বিগত বছরের প্রশ্ন ভালোভাবে সমাধান করতে হবে। তা ছাড়া পুরোনো ভার্সনের নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ভাষার ব্যাকরণ বই থেকে সিলেবাসের সঙ্গে মিলিয়ে পড়া ভালো।
ব্যাকরণের একেবারে কঠিন কাটখোট্টা প্রশ্নগুলি কষ্ট করে মনে রাখার দরকার নেই। সবকিছু পারার পরীক্ষা বিসিএস নয়। কঠিন প্রশ্নে কোন বাড়তি মার্কস থাকে না, তাই ১টা কঠিন প্রশ্ন শেখার জন্য অনেকবেশি সময় না দিয়ে ওই একই সময়ে ১০টা সহজ প্রশ্ন শিখুন।
বিসিএস বাংলা প্রস্তুতি সারকথা
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে প্রিলিতে মোট ৩৫টি প্রশ্ন থাকে। দুটি বিষয়ে ভাগ করে এই নম্বর বরাদ্দ করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ভাষা অংশ এবং অন্যটি সাহিত্য অংশ। ভাষা অংশের জন্য ১৫ নম্বর বরাদ্দ আছে ১৫টি প্রশ্নের বিপরীতে। অন্যদিকে সাহিত্য অংশে প্রাচীন ও মধ্যযুগের সাহিত্য বিষয়ে ৫ নম্বর এবং আধুনিক যুগের (১৮০০ সন থেকে বর্তমান পর্যন্ত) সাহিত্য বিষয়ে ১৫ নম্বর বরাদ্দ থাকে।
বিসিএস বাংলা ভাষা (ব্যাকরণ) অংশের প্রস্তুতি
এই অংশে ভালো করতে হলে আপনাকে যে টপিকসমূহ খুবই মনোযোগের সাথে পড়তে হবে সেই টপিকসমূহ হচ্ছে, ধ্বনি, শব্দ, বাক্য, বানান এবং বাক্য শুদ্ধি, সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দ, প্রত্যয়, পরিভাষা, সমাস, বাগধারা, এককথায় প্রকাশ ইত্যাদি।
বিসিএস বাংলা ভাষা (সাহিত্য) অংশের প্রস্তুতি
বাংলা সাহিত্য অংশে ভালো করতে হলে আপনাকে গুরুত্ব সহকারে বাংলা সাহিত্যের যুগভিত্তিক পড়াশোনা করতে হবে।
প্রাচীন ও মধ্যযুগঃ
এই যুুগের মধ্যে আছে মূলত চর্যাপদ। তাই একথা বলে দেয়া যায় যে, বিসিএস প্রিলিতে এই বিষয়ে প্রশ্ন আসবেই। মধ্যযুগের ক্ষেত্রেও টপিক খুব বেশি নেই। প্রাচীন যুগের চর্যাপদের পাশাপশি মধ্যযুগের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, মনসা মঙ্গল কাব্য, খনার বচন, মৈথিলি কাব্য, ইউসুফ-জোলেখা ইত্যাদি টপিকসমূহ ভালো মতো পড়লে খুব সহজেই এই অংশের জন্য বরাদ্দ থাকা ০৫ নম্বর সহজেই পেতে পারেন।
আধুনিক যুগঃ
প্রাচীন ও মধ্যযুগের তুলনায় আধুনিক যুগের ব্যপ্তি বেশ অনেকটাই বড়। সাধারণত বাংলা সাহিত্যের শিক্ষার্থীরা এই অংশে তুলনামূলকভাবে বেশি ভালো করে থাকে। তবে আপনি বাংলা সাহিত্যের ছাত্র না হলেও কয়েকজন বিশেষ সাহিত্যিকর সাহিত্য ভালো ভাবে পড়লে এই অংশে অন্তত ৮০% থেকে ৮৫% নম্বর পেতে পারেন। এই সাহিত্যিকগণ হচ্ছেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীম উদদীন, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মীর মশাররফ হোসেন, দীনবন্ধু মিত্র, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন, কায়কোবাদ, ফররুখ আহমদ, জীবনানন্দ দাশ, বিষ্ণু দে, অমিয় চক্রবর্তী, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত এবং বুদ্ধদেব বসু।
উল্লেখ্য, জীবনানন্দ দাশ, বিষ্ণু দে, অমিয় চক্রবর্তী, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত এবং বুদ্ধদেব বসুকে একত্রে বাংলা সাহিত্যের পঞ্চপাণ্ডব বলা হয়ে থাকে।
গুরুত্বপুর্ণ পরামর্শ
- প্রথমে বিগত সালের প্রশ্ন এনালাইসিস করুন।
- মুক্তিযুদ্ধ এবং ভাষা আন্দোলন বিষয়ক যে সাহিত্যকর্ম রয়েছে সেগুলো গুরুত্ব সহকারে পড়ুন।
- ঐতিহাসিক সংবাদপত্র ও সম্পাদক, লেখকদের সাহিত্যিক ছদ্মনাম ও উপাধি, বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত চরিত্র সমূহ, বাংলা সাহিত্যের যা কিছু প্রথম তা পড়ুন। ভ্রমণ কাহিনি, আত্মজীবনী, বিখ্যাত উক্তিসমূহ দেখুন।
- বাংলা একাডেমি ও পুরস্কার, এশিয়াটিক সোসাইটি, সাহিত্য সমাজ, ইয়ংবেংগল, ফোর্ড উইলিয়াম কলেজ, বঙ্গীয় ও মুসলিম সাহিত্য সমিতি, ঢাকা মুসলিম সাহিত্য সমাজ সম্পর্কে পড়ুন।
- ওরা এগারোজন( রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, রোকেয়া, জসীমউদ্দিন, বিদ্যাসাগর, মীর মশাররফ, মাইকেল মধুসূদন, দীনবন্ধু, বঙ্কিম , ফররুখ, কায়কোবাদ) ছাড়াও আরো অনেক কবি আছে যেগুলো থেকে বিগত বছরে প্রশ্ন এসেছে। সেই কবিদের সম্পর্কেও পড়ুন।
- বিগত বছরের প্রশ্নসমূহ সমাধান বা জব সল্যুশন অবশ্যই করতে হবে। এতে করে প্রশ্নপত্রের প্যাটার্ন সম্পর্কে ধারণা গড়ে উঠবে।
- ধ্বনি, শব্দ, বাক্য, বানান ও বাক্য শুদ্ধি, প্রত্যয়, পরিভাষা, বিপরীত শব্দ, সমার্থক শব্দ, সমাস, এক কথায় প্রকাশের মতো টপিকের পাশাপাশি সিলেবাসে না থাকলেও কিছু কমন টপিক পড়া জরুরি। যেমন, বাগধারা।
- আধুনিক যুগের উপর বেশি জোর দিতে হবে। কারণ এই অংশে প্রাচীন যুগের অংশ থেকে বেশি নম্বর বরাদ্দ থাকে।
- ৯ম-১০ম শ্রেণীর NCTB প্রকাশিত বাংলা ব্যাকরণ বোর্ড বই অবশ্যই পড়তে হবে। নতুন ভার্সনের বইসমূহ থেকে পুরাতন ভার্সনের বইয়ে তথ্য বেশি আছে বিধায় পুরনো ভার্সন পড়লে সুবিধা হবে। তবে সাম্প্রতিক তথ্যের ক্ষেত্রে কোন বিভ্রান্তি থাকলে নতুন ভার্সন অনুসরণ করে উত্তর দিতে হবে।
- বাংলা সাহিত্য প্রাচীন অংশের জন্য হুমায়ূন আজাদ সাহেবের লেখা লাল নীল দীপাবলি বইটা পড়লে ভালো হবে। এই বইটা থেকে প্রতি বছরই কয়েকটি প্রশ্ন এসে থাকে।
- বাংলা সাহিত্য আধুনিক অংশের জন্য বাংলাপিডিয়ার পাশাপাশি Live MCQ প্রদত্ত পিডিএফসমূহ থেকেও পড়াশোনা করলে উপকৃত হবেন।
- যাই পড়বেন সেটাকে শুধুমাত্র প্রিলির জন্য না পড়ে লিখিত এবং ভাইবার কথা মাথায় রেখে পড়বার চেষ্টা করবেন। অর্থ্যাৎ যেকোনো টপিক ডিপ লারনিং বা গভীরভাবে জানার ও শেখার চেষ্টা করতে হবে।
- বাংলা সাহিত্যের বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে এমন বাংলা পত্রিকা ও সম্পাদক এবং মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের উপর ভিত্তি করে লেখা সাহিত্যকর্ম থেকে বিসিএস প্রিলিতে প্রায় নিয়মিতই প্রশ্ন এসে থাকে। তাই এসব বিষয়ে ফোকাস করা জরুরি।