বিসিএস প্রিলি বা রিটেন পরীক্ষা যেটাই বলেন না কেন বিসিএস পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি নম্বরের পার্থক্য সৃষ্টিকারী বিষয় ‘গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা’। তাই ক্যাডার হওয়ার দৌড়ে নিজেকে এগিয়ে রাখতে এই ২ টি বিষয়ে জোড় দিয়ে ৪৭ তম বিসিএস প্রস্তুতি নিতে পরিকল্পিতভাবে পড়াশোনা করতে হবে।
ভাষাগত যৌক্তিক বিচার, সমস্যা সমাধান, বানান ও ভাষা, যান্ত্রিক দক্ষতা, স্থানাঙ্ক সম্পর্ক এবং সংখ্যাগত ক্ষমতা—এই ছয় বিষয় থেকে মানসিক দক্ষতার প্রশ্ন করা হয়। বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিতের জন্য মানসিক দক্ষতার সিলেবাস প্রায় একই। তাই প্রথমেই আগের প্রিলিমিনারি ও লিখিতের সব প্রশ্ন ব্যাখ্যাসহ পড়তে হবে। মানসিক দক্ষতাও গণিতের মতোই নিয়মিত অনুশীলনের বিষয়। যেকোনো সহায়ক বই কিংবা অনলাইনভিত্তিক কিছু ওয়েবসাইট থেকেও মানসিক দক্ষতার চর্চা করা যায়।
মানসিক দক্ষতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে সব সময়ই প্রশ্ন আসে। সেগুলো হচ্ছে—রক্তের সম্পর্ক নির্ণয়, সাদৃশ্য, কোডিং–ডিকোডিং, শূন্যস্থান পূরণ, ভিন্ন শব্দ শনাক্ত করা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের সামর্থ্য, বর্ণের ক্রম, সিরিজ সম্পন্নকরণ, চিত্রে যৌক্তিক সংখ্যা বসানো, দিক নির্ণয়, সম্পর্ক নির্ণয়, সঠিক চিত্র শনাক্তকরণ, সংখ্যার ওপর বিভিন্ন ধাঁধা, আয়নায় শব্দের প্রতিফলন, বিভিন্ন যন্ত্রের ব্যবহার, ভারসাম্য রক্ষা, শুদ্ধ বানান, সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ, ঘড়ি, দিন, ত্রিভুজ বা চতুর্ভুজ গণনা, স্থানাঙ্ক উপলব্ধি ও জটিল যন্ত্রের পরিচালনা। এ বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে শিখে নিতে হবে। মানসিক দক্ষতায় ভালো করার জন্য উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উপস্থিত বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানসিক দক্ষতার অনেক প্রশ্ন সহজেই উত্তর করা যাবে।
৪৭ তম বিসিএস গণিত প্রস্তুতি গাইডলাইন (47 BCS preparation math)
গণিত ভীতি কম বেশি সবারই আছে। বিসিএস এর মত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় মাথা ঠান্ডা করে গণিতে ভাল নম্বর খুব কম প্রার্থীই পেয়ে থাকে। বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষাতে যেসব বিষয়ে আপনাকে পারদর্শী হতেই হবে এর মধ্যে গাণিতিক যুক্তি অন্যতম। কারণ প্রিলিতে গণিতে ভালো প্রিপারেশন নিলে লিখিত পরিক্ষায়ও ভাল নম্বর পাওয়া যায়। বিসিএস গণিত সিলেবাস খুবই স্পেসিফিক। তাই বিসিএস গণিত প্রস্তুতি নিতে সিলেবাস ধরে ধরে টপিক অনুসারে নিজের দুর্বলতা ও দক্ষতা খুঁজে বের করতে হবে। সুশৃঙ্খলভাবে পরিকল্পনা করে অনুশীলন করলে সাফল্য আসবেই।
৪৭ তম বিসিএস গণিত সিলেবাস ও মানবন্টন
গাণিতিক যুক্তি (মার্ক- ১৫):
- পাটিগণিত (৩ নম্বর)
- বীজগণিত (৬ নম্বর)
- জ্যামিতি (৩ নম্বর)
- বিচ্ছিন্নগণিত (৩ নম্বর)
রেফাররেন্স বুকঃ
- ৮ম, ৯ম-১০ম শ্রেণির বোর্ড বই
- উচ্চতর গণিত থেকে কিছু টপিক্স সিলেবাস দেখে
- উচ্চ মাধ্যমিক গণিত (বিন্যাস, সমাবেশ, সম্ভবতা, সূচক, লগারিদম)
- সাইফুরস ম্যাথ / খাইরুলস ম্যাথ
- বিগত বছরের প্রিলি ও রিটেন সল্ভ
তাছাড়া আপনি অনুশীলনের জন্য গাইড বই ফলো করতে পারেন। (যেমনঃ এম্পিত্রি / কনফিডেন্স)
সিলেবাস ও মানবন্টন:
পাটিগণিত (৩ নম্বর)
- বাস্তবসংখ্যা
- লসাগু ও গসাগু
- শতকরা
- সরল ও যৌগিক মুনাফা
- অনুপাত ও সমানুপাত
- লাভ – ক্ষতি
বীজগণিত (৬ নম্বর)
- বীজগাণিতিক সূত্রাবলী
- বহুপদী উৎপাদক
- সরল ও দ্বিপদী সমীকরণ, দ্বিপদী অসমতা, সহসমীকরণ
- সূচক ও লগারিদম
- সমান্তর ও গুণোত্তর ধারা
জ্যামিতি (৩ নম্বর)
- রেখা ও কোন
- ত্রিভুজ ও চতুর্ভুজ সংক্রান্ত উপপাদ্য
- পিথাগোরাসের উপপাদ্য
- বৃত্ত সংক্রান্ত উপপাদ্য
- পরিমিতি- সরলক্ষেত্র ও ঘনবস্তু
বিচ্ছিন্নগণিত (৩ নম্বর)
- সেট
- বিন্যাস ও সমাবেশ
- পরিসংখ্যান
- সম্ভাব্যতা
এই অধ্যায় ছাড়াও কিছু কিছু টপিক থেকে মাঝে মাঝে প্রশ্ন করা হয়। যেমনঃ
- ঐকিক নিয়ম
- ট্রেন ও গতিবেগ
- নৌকা ও স্রোত
- নল ও চৌবাচ্চা
- সময়, দূরত্ব ও গতিবেগ
- কাজ ও দিন
- মিশ্রণ
কিছু পরামর্শঃ
👉 বিসিএস গণিতে ভালো করার একটিমাত্র উপায় প্র্যাকটিস, প্র্যাকটিস এবং প্র্যাকটিস। আপনি যদি গণিতে দুর্বল হয়ে থাকেন তাহলে গুরুত্ব সহকারে প্রতিদিন প্র্যাকটিস করুন। গণিতে আপনার অবস্থা যেমনই হোক না কেন, এর জন্য নিয়মিত কিছু সময় বরাদ্দ রাখুন। 👉 প্রস্তুতির (BCS prostuti) শুরুতেই প্রথমে নিজের লেভেলটা যাচাই করুন। যদি দক্ষতার লেভেল খুব দুর্বল থাকে, তাহলে পঞ্চম শ্রেণির বই দিয়ে প্রস্তুতি শুরু করতে পারেন। ক্যালকুলেটর ছাড়া অঙ্ক করার অভ্যাস করুন। 👉 সিলেবাস (BCS Math Syllabus) ধরে ধরে অধ্যায়ভিত্তিক অনুশীলন করুন। গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলোর ওপর বাড়তি নজর দিন। 👉 বোর্ড বই শেষ করে বিগত বছরের প্রশ্ন ও বাজারের প্রচিলিত যেকোনো ভালো মানের গাইড বই অনুশীলন করুন। 👉 পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য বিগত বছরগুলোর বিসিএস প্রশ্নগুলো সমাধান করুন। যে ধরনের অংক জটিল ও সময়সাপেক্ষ মনে হবে, সেগুলো আলাদা নোট করে রাখুন। 👉 গনিতে যারা দুর্বল, তারা খাইরুল স্যারের ব্যাসিক বইয়ের সাহায্য নিতে পারেন। যারা সম্ভাব্যতা, বিন্যাস ও সমাবেশ এ দুর্বল, তারা Youtube থেকে অন্যরকম পাঠশালা এর ভিডিওগুলো দেখতে পারেন। 👉 বিগত বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় আসা অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে তুলনামূলক বেশি ও কম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শনাক্ত করুন। 👉 ৩৫-৪৩ বিসিএস এর প্রশ্ন এনালাইসিস করে দেখা গেছে, ⇒ বীজগণিতের মধ্যে সরল ও দ্বিপদী অসমতা, বীজগাণিতিক সূত্রাবলী, লগারিদম, সূচক, গুনোত্তর ধারা, সমান্তর ধারা, সরল ও দ্বিপদী সমীকরণ এই টপিক গুলো থেকে প্রায় প্রতিবার এক বা একাধিক প্রশ্ন আসে। তাই এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। ⇒ পাটিগণিতের মধ্যে ল.সা.গু / গ.সা.গু, শতকরা, সরল ও যৌগিক মুনাফা, লাভ ক্ষতি, বাস্তব সংখ্যা, অনুপাত – সমানুপাত এই টপিক গুলো থেকে প্রশ্ন আসে। তাই এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। ⇒ জ্যামিতির মধ্যে কোণ, ত্রিভূজ, বৃত্ত, চতুর্ভুজ এই টপিক গুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ⇒ সেট, সমাবেশ, সম্ভাব্যতা থেকে প্রায় প্রতিবার প্রশ্ন থাকে। তাই এগুলো খুব গুরুত্ব সহকারে পড়া উচিৎ। ⇒ রেখা, পিথাগোরাসের উপপাদ্য, পরিমিতি- সরলক্ষেত্র ও ঘনবস্তু, বিন্যাস,পরিসংখ্যান, বহুপদী উৎপাদক, সরল সহ সমীকরণ এগুলো থেকে তেমন প্রশ্ন আসে না। তাই এগুলো কম গুরুত্বপুর্ণ বলা যেতে পারে।